ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে থই থই করছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে সাতকানিয়া ও সমগ্র লোহাগাড়া উপজেলা এলাকা কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি চন্দনাইশ, বাঁশখালী, পটিয়া, রাউজানের অধিকাংশ এলাকায় পানিবন্দি হয়ে দুর্গত অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে হাজারো মানুষ। এসব এলাকার ফসলের ক্ষেত, দোকান-পাট, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পানিতে ডুবেছে।
একইভাবে পানিতে তলিয়ে দুইদিন ধরে প্রায় বন্ধ অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। তবে বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুর থেকে মহাসড়কের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া অংশের পানি কমতে শুরু করলেও চন্দনাইশ অংশে বাড়তে থাকে।
চট্টগ্রামের পানিবন্দি এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারিভাবেও ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব বলেন, পুরো সাতকানিয়া এখনো পানির নীচে। কেরানি হাট থেকে পানি কমতে থাকলেও পুরো উপজেলায় মঙ্গলবারের চেয়ে ১০ শতাংশ পানি নেমেছে মাত্র। আমাদের বাঁশখালী চানপুর হয়ে সাতকানিয়ায় যেতে হচ্ছে। উপজেলা পরিষদে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। নৌকায় করে উপজেলা পরিষদে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, পানিবন্দি মানুষের জন্য নতুন করে সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে এবং এলাকার বিত্তশালীরা ব্যক্তিগতভাবে দুর্গত মানুষকে সহায়তা করছেন।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ অংশের কসাইপাড়া থেকে বিস্তৃর্ণ সড়কে এখনো হাঁটু পানি। সকালে পানি কিছুটা কমলেও বিকেলের দিকে আবার বেড়েছে। এতে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে চরম ব্যাঘাত হচ্ছে। তবে মহাসড়কটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, রাউজানের একটি অংশ এবং পটিয়ার একটি অংশসহ চট্টগ্রাম জুড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ৫শ আশ্রয়কেন্দ্র সম্পূর্ণ রেডি অবস্থায় আছে। পুরো চট্টগ্রামে ৬শ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সাতকানিয়ায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছার বিষয়ে তিনি বলেন, সাতকানিয়ার প্রায় সব সড়ক পানিতে ডুবে আছে। গাড়ি করে পানিবন্দি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষের মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সাতকানিয়ায় সবচেয়ে বেশি খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখনো যারা সরকারি খাদ্য সহায়তা পাননি, পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে এসব সহায়তা পৌঁছানো হবে বলে জানান তিনি।
সুপেয় পানির সংকটের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে কয়েকটি বেসরকারি উদ্যোক্তা থেকে আমরা পানিবন্দি দুর্গত মানুষের জন্য দুই লাখ লিটার বোতলজাত পানি সংগ্রহ করেছি। এসব বোতলজাত সুপেয় পানি দুর্গত মানুষের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।