টনসিলের সমস্যায় ছোট-বড় কমবেশি সবাই ভোগেন। আর যাদের টনসিলের সমস্যা আছে, তাদের মানতে হয় অনেক ধরনের নিয়ম-কানুন। টনসিলের সমস্যায় ঢোক গিলতে ও খেতে খুব কষ্ট হয়। সাধারণত সর্দি-কাশির জন্য দায়ী বায়ুবাহিত জীবাণু। টনসিলের সংক্রমণ কমাতে ওষুধের চেয়েও বেশি প্রয়োজন যত্ন।
টনসিল কী?
মুখগহ্বরে জিহ্বার শেষের দিকে গলার দু’পাশে যে গোলাকার অংশ দেখা যায়, সেটিই হলো টনসিল। মাংসপিণ্ডের মতো দেখতে হলেও এটি একটি টিস্যু বা কলা।
মুখ, গলা, নাক, কান দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয় এই টনসিল। তাই টনসিল আক্রান্ত হলে জীবাণুর প্রকোপ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেয়।
টনসিলাইটিসের লক্ষণ কী কী?
>> গলার ভেতরে ফোসকা বা ঘা
>> হঠাৎ গলা ব্যথা
>> গিলতে ব্যথা ও অসুবিধা
>> নাক ডাকা
>> ক্ষুধা কমে যাওয়া
>> ক্লান্তি
>> ঠান্ডা
>> গলা ও মুখ ফুলে যাওয়া ও
>> জ্বর।
টনসিলের সমস্যায় স্বস্তি পেতে করণীয়
ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে যত্ন নিলেও টনসিলের সমস্যায় দ্রুত স্বস্তি মেলে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক টনসিল ইনফেকশনের গুরুতর প্রভাব কমানো ঘরোয়া উপায়-
গরম ও ঠান্ডা তরল পান করা
টনসিলের সমস্যায় স্বস্তি পেতে ভেষজ চা পান করুন। এর পাশাপাশি চিকেন স্যুপ পান করুন। এতে টনসিলের ব্যথা কমবে। এছাড়া বরফ বা পপসিকেলস চুষে চুষে পান করতে পারেন। এতেও উপকার মিলবে।
গার্গলিং
এক গ্লাস গরম পানিতে লবণ বা বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে পারেন। যখন প্রয়োজন তখন এই তরল দিয়ে গার্গল করুন। তিবে লবণ পানি গিলবেন না। গলার ফোলাভাব ও জ্বালাপোড়া কমাতে লবণ উপকারী। বেকিং সোডা গলা ব্যথা প্রশমিত করে।
বাষ্প বা স্টিম নিন
স্টিম নেওয়ার মাধ্যমে গলা পরিষ্কার করা যায় সহজেই। চাইলে গোসলের সময়ও স্টিম নিতে পারেন, আবার গরম পানিতে উপর মাথা ঝুঁকিয়েও নিতে পারেন।
বিশ্রাম
টনসিলের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে বিছানা উঁচু করে বা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। একদম চিৎ হয়ে শুয়ে থাকবেন না। এতে আপনার ঘাড়ের পেছনে চাপ পড়বে ও প্রদাহ আরও বাড়তে পারে।
গরম পানির সঙ্গে মধু
মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, যার কারণে এটি ক্ষত নিরাময়কারী হিসাবে কাজ করে। এছাড়া এটি ব্যথা উপশম করে ও ফোলাভাব কমায়। মধু ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করতে পারে।
লেবু-পানি
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ব্যথা কমতে পারে। লেবুর রস শ্লেষ্মা নরম করে ও ব্যথা উপশম করে দিতে সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া লেবুর রসে ভিটামিন সি আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে ও শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
ভেষজ চা
বিভিন্ন ধরনের চা আছে যা গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। লবঙ্গ চা ও গ্রিন টিতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
এছাড়া রাস্পবেরি, পেপারমিন্ট ও ক্যামোমাইল চা প্রদাহ (ফোলা) ও ব্যথা কমানোর জন্য দুর্দান্ত বিকল্প। পেপারমিন্ট চা ব্যথা উপশম করতে পারে।
শিশুর টনসিলের ঘরোয়া প্রতিকারের বিষয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর সপ্তগিরি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও পেডিয়াট্রিক নিউরোলজির পরামর্শদাতা ডা. এমজি কার্থেকা (এমবিবিএস, এমডি, শিশুরোগ) জানান, টনসিলের চিকিৎসায় মধু, থাইম বা লেবু বেশ কার্যকরী।
এই প্রতিকারগুলোর খুব কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই আমরা এগুলোকে টনসিলাইটিসের চিকিত্সা হিসেবে প্রস্তাবিত চিকিত্সার পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে থাকি।
টনসিলের হলে যা করা মানা
>> অনেকেই টনসিলের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার পান করেন। যদিও এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, তবে এটি গলা ব্যথা ও গলার সংক্রমণের জন্য উপকারী নয়।
>> টনসিলের উপসর্গগুলো কমাতে এসেনশিয়াল অয়েলের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কারণ এসব তেল কতটা কার্যকরী সে বিষয়ে এখনো তেমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
>> টনসিল হলে গলার প্রদাহ বাড়ে এমন জিনিস এড়িয়ে চলুন যেমন-ধূমপান, শুকনো বাতাস, মসলাদার খাবার ইত্যাদি।
টনসিলের ঝুঁকি কমাতে কী করবেন?
>> ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে আপনার মুখ ও নাক স্পর্শ করার আগে।
>> অসুস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে খাবার, পানীয় ও পাত্র ভাগাভাগি এড়িয়ে চলুন।
>> নিয়মিত আপনার টুথব্রাশ বদল করুন।
সূত্র: ফার্মাসি