রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রবিবার শুরু হওয়া প্রথম ইবনে আল-হাইসাম সায়েন্স ফেস্টে দিনব্যাপী জুনিয়র সায়েন্টিস্ট হান্ট প্রোজেক্ট শোতে অংশ নিয়েছে ৩৪০টি টিম। এছাড়াও রবিক্স কিউব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে প্রায় ৯০০ জন প্রতিযোগী। প্রতিযোগীদের প্রজেক্ট প্রদর্শনী, রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন বিষয়ের বুথ প্রদর্শনীতে দিনভর ছিলো দর্শনার্থীদের ঢল।
খুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী প্রজেক্টগুলো অভিভূত করে বিচারক প্যানেলসহ উপস্থিত সবাইকে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে আগত শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ হাতে তৈরি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে দেখিয়েছে যে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে কীভাবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। অতিথিদের সামনে ব্যাখ্যা দিয়েছে উদ্ভাবনে উদ্দেশ্য ও ব্যবহারিক বিষয়। কেউ কেউ উড়িয়ে দেখিয়েছে নিজের তৈরি ড্রোন। কেউ আবার দেখায় ঘরে আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তা জেনে যাওয়া একটি ডিম্বাকৃতির মেশিন। মেশিনটি আবার পানি দিয়ে আগুনও নেভাতে পারে। কারো উপস্থাপনায় ছিলো সূর্যের আলোতে কীভাবে চলবে গাড়ি কিংবা রিমোট কন্ট্রোলড লাইট। কাগজ কেটে তুলে ধরা হয়, স্বপ্নের লেভিট্র্যাক। চুম্বকের বিকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে ভেসে ভেসে চলবে এই ট্রেন। থাকবে না চাকা।
সায়েন্স ফেস্টে শতাধিক স্টল বসান দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বিজ্ঞানপ্রিয় শিক্ষার্থীরা। ফেস্টে শিক্ষার্থীরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ফ্যাক্টরি পরিচালনা করে কার্বন নিঃসরণ, ড্রোন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, আধুনিক নগর পরিকল্পনা, বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, কোল্ড স্টোরেজ সিস্টেম, পরিবেশ দূষণ না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ রোধী উপায়, গ্যাস পৃথককরণ প্রজেক্ট, আরবান রেজিল্যান্স ড্রেনেজ অ্যান্ড সুয়েজ সিস্টেমসহ শতাধিক স্টল বসানো হয়।
দিন শেষে জুনিয়র সায়েন্টিস্ট হান্ট- প্রজেক্ট শোতে ১ম স্থান অধিকার করেছেন সেন্ট জোসেফ কলেজের শিক্ষার্থীদের টিম ‘প্লাজমা রাইডার।’ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ পাবলিক কলেজ টিম ‘এরোনার্ড’। তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের টিম ‘স্মার্ট এজ’, চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের টিম ‘আটলান্টিস এক্সপ্লোরার’ এবং ৫ম স্থান অধিকার করেছে সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীদের টিম ‘হাই ফ্লাইয়ারস’।
বিজয়ী চ্যাম্পিয়ন দলকে পুরস্কার হিসেবে ৬০ হাজার টাকা, রানার্স আপ দলকে ৪০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অধিকারীকে ৩০ হাজার টাকা, চতুর্থ স্থান অধিকারীকে ২০ হাজার টাকা এবং পঞ্চম স্থান অধিকারীদে ১০ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়।
এছাড়াও রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ঢাকার মুনতাজিম বিল্লাহকে ১৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম থেকে অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের অভিরূপ দাস ১০ হাজার টাকা এবং মিরপুর থেকে অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে অর্জনকারী ফারহান পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৫ হাজার টাকার সঙ্গে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট।
সমাপনী ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ইসলামিক ছাত্র সংগঠন ইফসুর সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ প্রধানসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের মেধা এবং সৃজনশীলতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আজকের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা আগামী দিনের নেতৃত্বে থাকবে এবং বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।’
অতিথিরা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা দেখে অভিভূত হন এবং ইভেন্টের আয়োজক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিজ্ঞানচর্চার প্রতি প্রশংসা জানান। তারা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চার উৎকর্ষ অর্জনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ জরুরি, যাতে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী উদ্যোগে উৎসাহ প্রদান করা যায়।’