আসন্ন অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশনা সংস্থা আদর্শকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। মেলার স্টল বরাদ্দসংক্রান্ত শর্তাবলি মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে প্রকাশনা সংস্থাটিকে কোনো স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার দুপুরে একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আকবর হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ২১ জানুয়ারি বিকেলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এবার আদর্শকে কোনো স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এমনকি প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ বইমেলার স্টল বরাদ্দসংক্রান্ত শর্তাবলি মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে স্টল বরাদ্দের লটারিতে অংশগ্রহণেও অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বসাধারণকে অবগত করা যাচ্ছে যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক, মুদ্রণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশনা সংস্থা 'আদর্শ'কে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ স্টল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না মর্মে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি বাংলা একাডেমির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি এখনও পর্যন্ত কোনো প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দেয়নি। ২২ জানুয়ারি আবেদনকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ নীতিমালা মোতাবেক ৩১ সদস্য বিশিষ্ট অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটি উক্ত বরাদ্দ প্রদান করবেন। তবে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ পরিচালনা কমিটি আদর্শ প্রকাশনা কর্তৃক প্রকাশিত লেখক ফাহাম আব্দুস সালাম রচিত "বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে" বইটি সংগ্রহ করে। এবং উপর্যুক্ত বইটি পাঠ করে কমিটি অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ "নীতিমালা ও নিয়মাবলি" এর ১৪ নং অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ ১৪.১৪, ১৪.১৫-এ বর্ণিত শর্তাবলি পূরণে সক্ষম হয়নি বিবেচনায় আনে। এরপর প্রকাশনা সংস্থা "আদর্শ"র প্রকাশক মাহাবুব রহমানের বক্তব্য শোনার জন্য বাংলা একাডেমির পরিচালক ও অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা ২০২৩ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এবং উপর্যুক্ত বই সম্পর্কে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের জন্য তাকে আহ্বান জানান। বইমেলার সদস্য সচিব উপর্যুক্ত বইটি বইমেলায় প্রদর্শিত হবে না, এই মর্মে একটি লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। এবং আসন্ন বইমেলার নীতিমালা অনুসরণ করতে জনাব মাহাবুবকে বিনীত আহ্বান জানান। প্রত্যুত্তরে জনাব মাহাবুব উপর্যুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না বলে দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান ব্যক্ত করেন।
পরবর্তীকালে তিনি উল্লেখ করেন যে, অমর একুশে বইমেলার বিদ্যমান নীতিমালা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বইমেলার এই নীতিমালা মানেন না বলে স্পষ্টভাবে জানান, যা পরবর্তীকালে তার বরাত দিয়ে গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, স্টল বরাদ্দ না পেলে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হবেন। প্রয়োজনে তিনি বিদেশি সহযোগিতা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন। পরিচালনা কমিটিতে জনাব মাহাবুবের বক্তব্যটি উপস্থাপন করবেন কি না, সে বিষয়ে সদস্য সচিব তার কাছে জানতে চাইলে তিনি "হ্যাঁ-সূচক" জবাব প্রদান করেন।
'আদর্শর বিতর্কিত বইটির ১৫নং পৃষ্ঠায় বাঙালি জাতিসত্তা; ১৬ নং পৃষ্ঠায় বিচার বিভাগ, মাননীয় বিচারপতিগণ, বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যবৃন্দ; ২০নং পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ৭১ নং পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশ্লীল, রুচিগর্হিত, কটাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। উপর্যুক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থি। যারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন, আমাদের বিশ্বাস তারা এই বিতর্কিত বইটি পাঠ করেননি অথবা পাঠ করলেও বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২)-এর মর্মার্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হননি।'
'সংবিধানে বলা আছে, ৩৯(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে; (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।'
'অনুরূপভাবে কমিটি মনে করে, বইটি অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর "নীতিমালা ও নিয়মাবলি"র অনুচ্ছেদ ১৪.১৪ ও ১৪.১৫-এর পরিপন্থি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে বইটি প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য বইমেলার স্টলে না রাখার বিষয়ে 'আদর্শ'র প্রকাশক মাহাবুব রহমানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তিনি উপর্যুক্ত বইটি স্টলে প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য রাখবেন বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যা বইমেলার নীতিমালায় বর্ণিত শর্তাবলির সম্পূর্ণ বিপরীত।'