নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শাহপরান (৩০) নামের রাইড শেয়ারের এক মোটরসাইকেলচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার নরসিংদী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেশকাত ইসলামের আদালতে হাজির করার পর রাইড শেয়ারের ওই নারীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
সোমবার (২ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলাশ থানার ওসি মো. মনির হোসেন।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মে, ২০২৫ তারিখ বিকেল সাড়ে ৩টায় ডাক্তার দেখাতে রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১২ নম্বর থেকে শ্যামলীর উদ্দেশে রওনা হন কর্মজীবী ওই নারী (২৬)। যাত্রা শুরুর পূর্বে চালককে গন্তব্য বুঝিয়ে দিয়ে যথানিয়মে চালকের দেওয়া হেলমেট মাথায় পরেন তিনি। এরপর আর কিছু মনে করতে পারেন না ভুক্তভোগী নারী। জ্ঞান ফিরে অজ্ঞাত খোলা স্থানে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন তিনি। সেখানে রাইড শেয়ার চালকের সঙ্গে দেখতে পান তার দুই সহযোগীকেও। চিৎকার করলে মেরে ফেলা হবে, এমন ভয় দেখিয়ে এরপর ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়। ধারণ করা হয় ভিডিও।
রোমহষর্ক এ ঘটনাক্রমের অকুস্থল ঢাকার মিরপুর-১২ নম্বর থেকে নরসিংদী জেলার পলাশ থানাধীন ঘোড়াশাল এলাকাস্থ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন একটি কালভার্টের নিচের নির্জন স্থান পর্যন্ত। ধর্ষণ ও ভিডিও করেই ক্ষান্তি দেননি রাইড শেয়ার চালক শাহপরান, তিনি ও চক্রের অপর সদস্যরা ওই নারীর কাছে থাকা সকল টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেন। সবশেষে নারীর গলায় ছুরি ধরে তার পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনদেরকে মোবাইলে কল দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং এ টাকা আনাতে বলেন। অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি দেন। এভাবে নগদ অর্থ ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারীর চাচা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করলে নরসিংদীর পলাশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরবর্তীতে ওই নারী বাদী হয়ে রাইডশেয়ার চালক শাহ পরানকে প্রধান আসামি ও চক্রের অপর দুই অজ্ঞাত সদস্যকে সহযোগী আসামি করে পলাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনা জানাজানি হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যেকোনো মূল্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার মধ্যরাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে পলায়নরত অবস্থায় চক্রের মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামি উবার চালক মো. শাহপরানকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন তারানগর বটতলী (দক্ষিণ পাড়া) এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল আলীর ৭ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।
এ বিষয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, রাইড শেয়ার চালক শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদেরকেও শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ছাড়াও রাইড শেয়ার ব্যবহার করতে সবাইকে বিশেষত নারীদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করার অনুরোধও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পলাশ থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, আদালতে হাজির করা হলে ওই নারীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শাহপরান।