গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার প্রচেষ্টা জোরদার এবং পশুপালন খাতের আধুনিকায়নের ওপর আরও গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (৩০ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি অনন্য মন্ত্রণালয়, এটি আমাদের সমুদ্র এবং আমাদের খামার উভয়কেই ধারণ করে। কিন্তু আমরা এখনও সমুদ্রের জগতে সম্পূর্ণরূপে পা রাখিনি। আমাদের কী ধরনের সামুদ্রিক সম্পদ আছে, কী হারাচ্ছি, কেন পিছিয়ে আছি—তা জানতে হবে। এই খাতটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে দেশের অর্থনীতিতে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।”
বঙ্গোপসাগরে যথাযথ জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার অঞ্চল চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে জাপান বা থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। জাপান আগ্রহ দেখিয়েছে আমাদের সাহায্য করতে। আমরা যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনাও বিবেচনা করছি। তবে তার আগে আমাদের নির্ভরযোগ্য তথ্য চাই। এটা শুধু বেশি মাছ ধরার বিষয় না; এটা একটা শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপার।
পশুপালন খাতে খাদ্য সংকট, রোগ ও ভ্যাকসিনের উচ্চমূল্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের দেশে পশুখাদ্য ও ভ্যাকসিন নিজস্বভাবে উৎপাদনের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এটাই খরচ কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ। বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা হালাল মাংসের বাজারে বাংলাদেশের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে এবং মালয়েশিয়া এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমাদের অবশ্যই এটি অন্বেষণ করা উচিত।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চামড়া ও গবাদিপশুর চামড়া নিয়ে সক্রিয় সিন্ডিকেট নিয়ে আগাম পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “একই সমস্যা যেন আবার না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।”
অধ্যাপক ইউনূস জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এটা হৃদয়বিদারক। আমি শুনেছি বছরের পর বছর ধরে পশুদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনকি তাদের খাবারও কখনও কখনও চুরি হয়ে যায়। এটা কেবল অমানবিক। চিড়িয়াখানার সম্পূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন।”
তিনি দেশের পশুচিকিৎসা ক্লিনিকগুলোকে আধুনিকীকরণেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “অনেক পশু চিকিৎসা কেন্দ্রই অকেজো বা পুরনো ধাঁচের, কিছু এমনকি কার্যকরও হচ্ছে না। আমাদের কৃষক এবং পোষা প্রাণীর মালিকদের জন্য প্রকৃত সহায়তা কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে।”
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ও একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিবরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।