পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামে ভারত থেকে আসা নীলগাই গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে সরকার গ্রামে সরকার পাড়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠের পশ্চিমে নীলগাইটি ধরা পড়ে। পরে খবর পেয়ে বনবিভাগের কর্মচারীরা উদ্ধার করে জেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে স্থানান্তর করা হবে।
সোমবার (১২ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সরকারপাড়া এলাকায় ভুট্টাখেতে ছোটাছুটি করছিল প্রাণীটি। এ সময় পাশের মরিচখেতে মরিচ তোলা নারীরা এটিকে হরিণ বা ঘোড়া ভেবে চিৎকার করে লোকজনকে ডাকাডাকি শুরু করেন। তাদের ডাকাডাকিতে স্থানীয় লোকজন এসে প্রাণীটির পিছু নেন। এ সময় একটি ভুট্টাখেত থেকে আরেকটি ভুট্টাখেতে ছুটছিল প্রাণীটি। ধীরে ধীরে উৎসুক লোকজন বাড়তে থাকলে শতাধিক মানুষ প্রাণীটির পেছনে ছুটতে থাকেন। পরে তারা প্রাণীটিকে ধরে ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে আসেন। স্থানীয় লোকজন প্রাণীটিকে আহত দেখতে পেয়ে ক্ষতস্থানগুলোতে ওষুধ লাগিয়ে দেন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দেন। এরই মধ্যে পঞ্চগড় বন বিভাগের কর্মীদের খবরও দেওয়া হয়। বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে গিয়ে একটি ভ্যানযোগে প্রাণীটিকে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, প্রথমে কেউ হরিণ আবার কেউ ঘোড়া বলে চিল্লাচ্ছিল। ধরা পড়ার পর বন বিভাগের লোকজন এসে প্রাণীটি নীলগাই বলে জানায়। পরে বন বিভাগ প্রাণীটি নিয়ে গেছে। আমাদের সরকারপাড়া এলাকা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে ভারতের সীমান্ত। মনে হচ্ছে, এটি ভারত থেকে এসেছে। প্রাণীটার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত ছিল। মনে হচ্ছে, কয়েক দিন আগেই এসব ক্ষত হয়েছে। এ জন্য প্রাণীটা কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে।
এ দিকে বন বিভাগের সদস্যরা নীলগাইটি উদ্ধার করে জেলা সদর প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে ভেটেনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজাউল করিম গাইটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। রেজাউল করিম জানান, আসলে গাইটির ক্ষত স্থানগুলো গভীরে চলে গেছে। তবে নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হলে ইনশা আল্লাহ সুস্থ হয়ে উঠবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন বলেন, খবর পেয়ে আমরা নীলগাইটিকে উদ্ধার করেছি। গ্রামবাসীদের ভাষ্যমতে, নীলগাইটি ভারত থেকে এসেছে। দৌড়ানোর কারণে গাইটি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গেছে। প্রায় পাঁচফিট লম্বা এই নীলগাইটি। মুখ মাথা এবং পায়ের চামড়া উঠে গিয়ে গোশতো বের হয়ে আছে। এ ধরনের প্রাণী আসলে বেশিক্ষণ লোকসমাগমে থাকলে স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে। তবে নীলগাইটি অন্য কোনো প্রাণীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হওয়ার কারণে আহত হয়ে থাকতে পারে। আমরা জেলা প্রাণী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর বেঁচে থাকলে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।