ফেনীতে বন্যাকবলিত জনপদে একপাশে স্বস্তি, অন্যপাশে উদ্বেগ

ফানাম নিউজ
  ১১ জুলাই ২০২৫, ১৫:০৮

ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে বছর না পেরোতে ফের বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পাঁচটি উপজেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে প্লাবিত হয়েছে একের পর এক জনপদ। বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েন লাখো মানুষ। তবে জেলার সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু কিছু এলাকা।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙনে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকা। প্লাবিত ১০৯টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

ফুলগাজী উপজেলা দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ পর আজ সূর্যের দেখা মিলেছে। বাড়িতে এখন হাঁটু সমান পানি রয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ থাকলে দ্রুত পানি নামবে বলে আশা করছি। এখনো বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের কিছু কিছু স্থানে পানি থাকায় এখনো যানচলাচল স্বাভাবিক হয়নি।

পরশুরামের পশ্চিম অলকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। পানির তোড়ে বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা কাজের কারণে প্রতিবছর আমাদের এতো দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এমন পরিস্থিতির জন্য নিজের ভাগ্যকেই দায়ী করি।

ফেনী সদর উপজেলার মোটবীর ইজ্জতপুর এলাকার বাসিন্দা রাশেদা আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করে। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছি। প্রশাসনের লোকজন খাবারের জন্য জিনিসপত্র দিয়ে গেছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা চার দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। তবে আজ সূর্যের দেখা মিলেছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর অংশে পানি অনেক বাড়ছে। বাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও মজুদ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ, মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তায় বন্যাকবলিত কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি অংশে ভাঙনের দেখা দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়