পটুয়াখালীর গলাচিপায় ১৪৪ ধারা জারি 

ফানাম নিউজ
  ১৩ জুন ২০২৫, ১৬:৪৬

পটুয়াখালীর গলাচিপায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। বিএনপি-গণঅধিকার পরিষদ যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিলে গলাচিপা পৌরসভা ও এর আশপাশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান। 

শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বেলা ১২টার দিকে গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। 

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান তাঁর লিখিত আদেশে বলেন, গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ও বকুলবাড়িয়া এলাকায় সংঘটিত সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং উভয়পক্ষের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এ প্রেক্ষিতে জনগণের জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে গলাচিপা পৌরসভাসহ এর আশপাশ এলাকায় শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা থেকে রোববার (১৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ সময় উল্লেখিত এলাকায় সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত,  বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র  ও সকল প্রকার দেশীয় অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস বাজারে গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং ভাঙচুর করা হয় বিএনপির কার্যালয়। এ সংঘর্ষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম নুরসহ উভয়পক্ষের ২০জন নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনার জন্য গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ একে অপরকে দায়ী করেছেন। 

এ ঘটনার সময় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকায় সাংঠনিক সফরে ছিলেন। চর বিশ্বাসের সংঘর্ষের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওইরাতেই উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকায় নুরুল হক নুরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা এবং তারা রাস্তায় রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রাখেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিরাপত্তায় রাত ৩টার দিকে ভিপি নুর গলাচিপা শহরে পৌঁছান। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নুরুল হক নুর বিকেল সাড়ে ৩টায় গলাচিপায় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পাশাপাশি উপজেলা বিএনপিও একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে গলাচিপা শহরসহ পুরো উপজেলা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেন।

জেলা গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো. শাহ আলম সিকদার বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই, আমরা কোনো হানাহানি-মারামারি চাই না। এ কারণে আমাদের নেতা নুরুল হক নুর ভাই বকুলবাড়িয়ার পাতাবুনিয়া এলাকায় পৌঁছার পর বিএনপির লোকজন অশ্লীল ও উসকানিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন। তারপরও আমরা ধৈর্য্য ধরে এবং শান্তিপূর্ণভাবে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাই। একপর্যায়ে বিএনপির কয়েকশ’ নেতাকর্মী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়েও তাদেরকে দমাতে পারে না। রাত ৩টার দিকে নুর ভাইকে নিয়ে আমরা গলাচিপায় আসি। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনসহ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। তবে প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা জারি করেছে তা আমরা জানিনা।

এ ঘটনার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুটি বলেন, ভিপি নুর বিভিন্ন সময় বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার, উসকানিমূলক, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের কারণে গলাচিপায় এই উত্তেজনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সে (ভিপি নুর) গলাচিপায় বিএনপির নমিনেশন নিয়ে নির্বাচন করতে চায় আবার বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। এটা তার কোনো ধরনের রাজনীতি আমি বুঝতে পারছি না। আমি ও আমার দল চায় শান্ত পরিবেশ। আর পটুয়াখালী জেলা সারা বাংলাদেশের মধ্যে একটি শান্ত জেলা হিসেবে পরিচিত। সেখানে ভিপি নুর এ ধরনের উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে, বক্তব্য দিয়ে গোটা পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলছে।  

এ বিষয়ে গলাচিপা থানার ওসি মো. আশাদুর রহমান বলেন, গলাচিপার পরিস্থিতি এখন শান্ত এবং ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। জনগণের জানমাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসন ১৪৪ ধারা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর এবং এ অবস্থায় ঘরোয়া পরিবেশেও সভা-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন কিছু করতে পারবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়