এসএমপি বাস্তবায়ন না হওয়ায় দেশের টেলিকম খাতে বাজার বৈষম্য বাড়ছে। বিগ ফিশের দৌরাত্ম্যে নিয়মিত বাজার ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে ছোট অপারেটররা। এমন পরিস্থিতিতে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা বাস্তবায়নের পাশাপাশি এখানে বাজার প্রতিযোগিতাও নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এই খাতের বঞ্চিত অপারেটররা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এই দাবি তোলা হয়। টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
‘‘টেলিযোগাযোগ খাত : বিনিয়োগে ধীরগতি ও অসম প্রতিযোগিতা’’ নিয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন দেওয়ান।
প্রবন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি নীতিমালা ও লাইসেন্সের দেওয়া অধিকারও পূরণ না করা, মোবাইল অপারেটরদের অবকাঠামো ভাগাভাগিতে সীমাবদ্ধতা এবং বাজার বৈষম্যের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়। বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টির এসএমপি বাস্তবায়ন না করায় উষ্মা প্রকাশ করে টেলিযোগাযোগ খাতে দানবীয় হয়ে উঠতে বিটিআরসি চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
উপস্থাপনায় জানানো হয়, জিডিপিতে ৮ শতাংশ অবদান রাখছে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো। ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এসএমপি প্রতিষ্ঠনটিকে বিশটি নিয়মের মধ্যে মাত্র তিনটি পালন করানো গেছে।
বাংলালিংকের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার জহরত আদিব চৌধুরী বলেন, সক্ষমতা থাকার পরেও এআইয়ের মাধ্যমে টেলিসেবার মান উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। বিদ্যমান আইনে বাজার ভারসাম্য আনা সম্ভব। আমরা এখানে বিনা লাভেই ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছি। ক্রস সাবসিডিতেও দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
রবির কর্পোরেট অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, দেশে মূল্য পতনের যুদ্ধ চলছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনে বিধি সিদ্ধ নয়। বাজারে কোন প্রতিযোগিতা না থাকায় ফটো অপারেটররা ক্ষুদ্র হয়ে ঝরে পড়ার অবস্থায় পৌঁছেছে। অসম প্রতিযোগিতা দূর করতে অবিলম্বে এসএমপি বাস্তবায়ন এবং অবকাঠামো ভাগাভাগি নীতিমালা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ এবং বাংলালিংকের বিনিয়োগ গ্রামীণের থেকেও বেশি। তারা অন নেট অফ নেট, রেলের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা এবং শ্রী তরঙ্গ দেওয়ার মত নানা ধরনের সরকারি সুবিধা নিয়ে মার্কেট লিডার হয়েছে।
টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মাবুদ বলেন, আমরা পনেরো বছর পর বাজারে এসেছি। ২০ বছরে আমরা দেড় হাজার কোটি টাকা লোন করে চলতে হচ্ছে। তারপরও সবার চেয়ে কম মূল্যে আমরা সেবা দিচ্ছি। তারপরও রাষ্ট্রের স্বার্থে নতুন সেবা দিচ্ছি। মানুষ আমাদেরকে চাইছে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক আবু নাসের বলেন, চলতি বছরে অক্টোবর থেকে দেশে কার্যত কোনো প্রতিযোগিতা কমিশন নেই। এখন পর্যন্ত বিটি আছে সঙ্গে প্রতিযোগিতা কমিশনের কোন বৈঠক হয়েছে বলে আমার জানা নেই। গার্ডিয়ান এবং গার্ডনার এখানে দায়িত্ব পালন করছে না। আমার মনে হয়, শ্রমবাজার ধ্বসে পড়ায় সরকার ও ব্যর্থ হচ্ছে। বাজার বিপদজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। যেকোনো সময় কলার্স করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, টেলিকম খাতে হাই ডায়াবেটিস হয়েছে। তাই খুব সতর্কতার সাথে পুরো সংস্কারের কাজটি করতে হবে।
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, বিটিআরসিকে নিজ উদ্যোগে এসএমপি গ্রামীণফোনকে নিয়ম মানতে বাধ্য করতে হবে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের আইনে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বিটি আকসের ঘাটতির কারণে আজ বাজারে এত বড় বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী। এছাড়াও আলোচক ছিলেন টেলিকম বিশেষজ্ঞ টিআইএম নূরুল কবির, বাংলালিংকের লিগ্যাল এন্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান ও এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার।