স্বীকৃতি ছাড়াই দেশজ অর্থনীতিতে পর্দার অন্তরালেই অবদান রাখছে দেশের ছেলে-মেয়েরা। আইসিটি ব্যবহার করছে। টেলিফোন ব্যবহার করে তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে ব্যবসা করছে। সফটওয়্যার রফতানি করছে। এভাবেই তরুণরা দেশ ও দুনিয়ার সীমারেখা জয় করে জাতিকে পথ প্রদর্শন করবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এর নজিরও দেখা গেলো ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৫-তে। মেলায় প্রবেশের ই-টিকেট ও ভিডিএস প্রচলন করার মাধ্যমে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করল বাংলাদেশ।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৫ উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, আগামীতে বাণিজ্য মেলা হবে দেশজুড়ে, বিদেশিদের নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় মেলা হবে। উপজেলা থেকে সেরা উদ্ভাবন আনতে পারলেই হবে প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। মানুষের কাজই হলো নিজের মন মতো কাজ করা। বাণিজ্য মেলা মানুষকে নিজের উদ্যোগকে ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসা করবে। সুযোগকে খাপে খাপে মিলিয়ে দেয়াটাই মেলার কাজ। আর রিটায়ার্ড শব্দটাকে ডিকশনারি থেকে বিদায় করে দিতে হবে।
বাংলাদেশের তরুণরা সম্ভাবনাময় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অনেক তরুণ-তরুণী কৃষি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, আইসিটিসহ বিভিন্নখাতে ব্যবসায় ভাল করছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা করছে- ঘরে বসে সফটওয়্যার তৈরি করে বিক্রি করছে। কাজেই প্রত্যেক উপজেলায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ জনকে চিহ্নিত করে তাদের তালিকা করা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য। সারা দেশ থেকে তরুণরা দলে দলে এদেরকে দেখতে আসবে। বিদেশ থেকে আসবে। ঢাকায় মেলায় একজন আরেকজনকে দেখে উৎসাহ পাবে।
এসময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, বাণিজ্য সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আব্দুর রহিম খান, এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এক্সিবিশন সেন্টারের উন্মুক্ত মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে স্থাপিত ইলেকট্রনিক বা ই-গেটটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংগৃহীত টিকিটের স্পর্শে মুহূর্তেই খুলে যায়। সাধারণভাবে ই-গেটে লাল বাতি জ্বালানো থাকে। সঠিক টিকিট প্রাপ্তি সাপেক্ষে সবুজ বাতি জ্বলবে এবং ই-গেট খুলে যায়।
স্মার্ট মোবাইল ফোনে ই-টিকেটের ইমেজ ও ভিসিবল ডিজিটাল সাইন (ভিডিএস) নামে পরিচিত কিউআর কোড প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গেই স্ক্যানারের কল্যাণে যাবতীয় তথ্য পৌঁছে যায় ই-গেটে। আর তথ্য প্রাপ্তির কল্যাণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য খুলে যায় এ গেট। একজন দর্শনার্থী প্রবেশের পর আবারও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ গেট বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তী দর্শনার্থী প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। এভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাজার হাজার দর্শক মেলায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন এ বছর।
প্রথমবারের মতো ই-টিকেট ব্যবস্থাপনা চালু হলেও কাগজের টিকিট ব্যবহার করে মেলায় প্রবেশের সীমিত সুযোগ রাখা হয়েছে। এ কাগজেও বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কাগজ এবং মোবাইল ফোনে সংযোজিত ভিসিবল ডিজিটাল সাইন (ভিডিএস) যাতে কোনো অবস্থায়ই বিকৃত বা নকল হতে না পারে সেজন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করছে সরকার স্বীকৃত দেশের অন্যতম সার্টিফাইং অথরিটি রিলিফ ভ্যালিডেশন লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কারিগরি সহযোগিতায় রয়েছে জার্মানের রাষ্ট্রায়ত্ত তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ভেরিডোজ।
মেলায় ই-টিকেট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে ডিজি ইনফোটেক নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ডিজি ই-পে নামে সহযোগী আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ঘরে বসেই মোবাইল টেলিফোননির্ভর যেকোনো আর্থিক লেনদেনের সুবিধা মিলছে।
বিআরটিসি বাস সার্ভিসের টিকিটের সঙ্গে মেলায় প্রবেশের টিকিট একই পদ্ধতিতে এবং একই কাউন্টার থেকে সংগ্রহের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মেলায় আগত অনেকেই। তাদের মতে, বিআরটিসি বাসে ওঠার জন্য যে দীর্ঘ লাইন ধরতে হয় সেই একই লাইনে দাঁড়িয়ে যদি একই বুথ থেকে মেলার টিকিটও কেনা যায় এবং এক টিকিটেই মেলায় প্রবেশ ও বাসে আসা-যাওয়া করার সুযোগ পাওয়া যায়, তবে তা সবার জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।
ডিজি ইনফোটেক ও ভেরিডোজ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহ ও দুটি স্থলবন্দরে ই-গেট স্থাপন, ব্যবস্থাপনা ও ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করছে।
মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’ ও ‘ছত্রিশ চত্বর’। এছাড়া দেশের তরুণ সমাজকে রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।
মেলার লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল, রেস্টুরেন্ট দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শতভাগ স্বচ্ছতায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যতীত সাতটি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে।
মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।