ভারতে ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করার এক প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছিল বলে যে তথ্য বেরিয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড ওই অর্থায়ন করেছিল অভিযোগে দেশটিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর মাঝেই শনিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য উৎসবে মার্কিন অর্থায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জয়শঙ্কর।
শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে গভর্নরদের নিয়ে আয়োজিত গভর্নর ওয়ার্কিং সেশনস অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউসএইডের অর্থায়নের এই তথ্য প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দেশটির নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জানায়, বাংলাদেশের জন্য ইউএসএইডের ওই সহায়তা বাতিল করা হয়েছে। একই দিন ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের কর্মসূচিসহ বিশ্বের ১১টি দেশে আর্থিক সহায়তা স্থগিত করে ডিওজি।
জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘নিজের বাড়ি না ছাড়লেও আপনার সুরক্ষা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ আপনার চিন্তার প্রক্রিয়া, প্রভাব, বয়ান, মনোবল, কী সঠিক এবং ভুল তা সম্পর্কে আপনার ধারণা ফোনের মাধ্যমেও প্রভাবিত হয়। আপনি প্রতিদিন কী পড়েন, কোন ধরনের ছবি দেখেন, সেসবও।’’
ভারতের ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে ইউএসএইডের ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের তহবিল নিয়ে করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে ভারতে তুমুল বিতর্ক চলছে। দেশটির সরকার ও বিরোধীরা ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। এই বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের লোকজন সেখানে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন এবং তা স্পষ্টতই উদ্বেগজনক।’’
দেশটির এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংস্থাগুলোর নিজেদের আখ্যান বা দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ আছে; যার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যও রয়েছে। সরকার হিসাবে আমরা এই বিষয়ে তদন্ত করছি। কারণ এই ধরনের সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমার বিশ্বাস, প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হবে।
তিনি বলেন, আমি এখন ইউএসএইড অথবা অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রে এসব ঘটেছে বলে দেখছি। দেখুন, আপনি ইউএসএইডের সঙ্গে কাজ করেন বা না করেন, প্রশ্ন সেটি নয়। ভারতে ইউএসএইডকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ঐতিহাসিকভাবে। এখানে ইউএসএইডকে ভালো কাজ করার জন্য সৎ বিশ্বাসে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে তারা অসৎ উদ্দেশে কাজ করেছে।
জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারতে যদি এই ধরনের কাজ করা হয়ে থাকে, তাহলে এই অসৎ কাজের সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা দেশের জানা উচিত। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ইউএসএইডের ওই অর্থ ভারতে ‘ডিপ স্টেট’ বজায় রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।