পেঁপে ছাড়া বাজারে প্রচলিত সবধরনের সবজির দামই অস্বাভাবিক বেড়েছে। ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। এর মধ্যে লাগামছাড়া দামে শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়, টমেটো ২৮০ ও বেগুন জাত ভেদে ১৬০-১৯০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। এমন অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই সবজি কেনার ক্ষেত্রে কেজি থেকে নেমেছেন গ্রামে। ২৫০ বা ৫০০ গ্রাম ওজনে সবজি কিনছেন বেশিরভাগ ক্রেতা।
তবে কিছুটা সুখবর মিলেছে কাঁচা মরিচের দামে। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কাঁচা মরিচ কেজিতে ১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টর কাঁচাবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানগুলোতে করলা, বেগুন, পটল, কাঁচা পেঁপে, শসা, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া শীতের আগাম সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, টমেটো, লাউ, গাজর, বেগুন এবং ধনেপাতাও বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে।
এসব সবজির মধ্যে শতকরা ৯৭ শতাংশের দামই ১০০ টাকা কেজি চাওয়া হচ্ছে। শুধু কাঁচা পেঁপের দাম কেজি ৪০-৪৫ টাকা।
আর সর্বোচ্চ দাম হাঁকা হচ্ছে শিম, গাজর, বেগুন, ফুলকপি ও পাতাকপির। আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি শিম ২৮০-৩০০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া নতুন ফুলকপি আকারভেদে ১০০-১১০ টাকা, বেগুন জাতভেদে ১৬০-১৯০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও চিচিঙ্গা ১০০ টাকা, কচুর ছড়া ১০০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, ঝিঙে ১০০ টাকা, টমেটো ৩০০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণেই সবজির দাম হঠাৎ বেড়েছে। তবে বৃষ্টি কমলে বাজারে সবজি সরবরাহ বাড়বে তখন দাম আবার হাতের নাগালে চলে আসবে। আবার অনেকেই বলছেন, উত্তরবঙ্গে বন্যার কারণে সবজির বাজারে বাড়তি চাপ পড়েছে।
সাদ্দাম হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘কাঁচা মরিচের দাম এখন ২৬০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে। দুদিন আগেও এর দাম ছিল ৩৬০ টাকা। তবে অন্যান্য সবজির দাম চড়া। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। অধিকাংশ সবজি তো ওইদিক থেকেই আসে।’
রফিকুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘সব সবজির দামই চড়া। তাই কাস্টমার বেশি সবজি নেয় না। অনেক ক্রেতাই এখন আধা কেজি (৫০০ গ্রাম) সবজি বেশি নিচ্ছেন।’
ক্রেতারা বলছেন, সবজির ঊর্ধ্বমুখী বাজারে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। শিগগিরই বাজার তদারকি বাড়িয়ে সবজির সরবরাহ বাড়াতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মনে করছেন অনেকে।
রুবিনা ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘দুই-তিনটা সবজি কিনলেই ৫০০ টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে অন্যান্য বাজার কিভাবে করবো। এ বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি তদারকি করা প্রয়োজন। বন্যা-বৃষ্টি হলে যেন সবজি বা নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে না যায় এ বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।’
এনামুল হাসান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতেই ৮০ টাকা লাগছে। আর অন্যান্য সবজি কেনার মতো উপায় নেই। ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। বাজারে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে।’
এছাড়া আগে থেকেই বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নিত্যপণ্য। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১০৫-১১৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৯৫-১০৫ টাকা, দেশি রসুন ২১০-২২০ টাকা, আমদানি করা রসুন (মানভেদে) ২০০-২২০ টাকা, দেশি আদা ৪৫০-৫০০ টাকা, আমদানি করা আদা ২৮০-৩০০ টাকা, শুকনো দেশি লাল মরিচ ৩৫০ টাকা, আমদানি করা শুকনো মরিচ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচা বাজার, মিরপুর ১ কাঁচাবাজার, নিউমার্কেট, রামপুরা বাজার, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার এবং কচুক্ষেত বাজারের সবজি ও নিত্যপণ্যের দরদাম পর্যালোচনা করে বলেছে, চলতি সপ্তাহে ময়দা (প্যাকেট), সয়াবিন তেল (বোতল), পাম অয়েল (লুজ), পাম অয়েল (লুজ), পেঁয়াজ (দেশী), পেঁয়াজ (আমদানি), হলুদ (দেশি), হলুদ (আমদানি), হলুদ (আমদানি), জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, গরু, মুরগি (ব্রয়লার), মুরগি (দেশি), চিনি, ডিম (ফার্ম), লম্বা বেগুন, শসা, লম্বা বেগুন, শসার দাম বেড়েছে।
এছাড়া দাম কমেছে, ডাল (মাঝারী দানা), মুগ ডাল (মানভেদে), এ্যাংকর ডাল, শুকনো মরিচ (দেশি), শুকনো মরিচ (আমদানি), আদার (আমদানি)।