লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় যে ফ্ল্যাটের মালিকানার কারণে সংবাদমাধ্যমের তোপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের এমপি এবং সাবেক ট্রেজারি ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক, সেটির উৎস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তিনি।
কিংস ক্রস এলাকার ফ্ল্যাট ইস্যুতে টিউলিপ কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন কী না— তা তদন্তের জন্য যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিত্বের মানদণ্ডবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। সেই তদন্ত শেষে তার ফলাফল জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন ম্যাগনাস।
চিঠিতে ম্যাগনাস বলেন, “টিউলিপ সিদ্দিক আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে কিংস ক্রস এলাকায় তার ফ্ল্যাটটি কোন উৎস থেকে এসেছে, তা জানতেন না তিনি। এতদিন টিউলিপ সিদ্দিকের ধারণা ছিল, তার বাবা-মা পূর্ববর্তী মালিকের কাছ থেকে ফ্ল্যাটি ক্রয় করে তাকে দিয়েছেন। তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে এই ২০২২ সালে সম্পদের যে বিবরণী দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে ফ্ল্যাটটির মালিকানা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছিল এবং এজন্যও দায়ী সেটির উৎস সম্পর্কিত অজ্ঞতা।”
লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে টিউলিপ সিদ্দিকের, যেটির মূল্য ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)। গত ৩ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, ২ শয্যাকক্ষের সেই ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য জানাচ্ছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। এরপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির সদস্য হন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড আসন থেকে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হন। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ওই আসনে চার বার প্রার্থী হয়েছেন টিউলিপ, প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাকে যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধামন্ত্রী কেয়ার স্টারমার।
টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প চুক্তিতে মধ্যস্থতা করারও অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সালে মস্কো সফরের প্রসঙ্গে ম্যাগনাস বলেন, “যে ছবিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপের খালা এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর ছবি রয়েছে তাতে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে কোনও আন্তঃসরকারি আলোচনায় বা কোনও ধরণের সরকারি ভূমিকায় তাঁর কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি এটাকে ‘ফেস ভ্যালু’ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।”