ভারতে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম আঘাত করেছে। এটি দুর্বল হতে শুরু করলেও এর প্রভাবে বুধবার থেকে ঢাকাসহ বাংলাদেশজুড়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে— শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং একই সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
এর সঙ্গে সঙ্গে শীত শুরু হওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। ঠিক কবে থেকে শীতকাল শুরু হতে পারে আর এবারের কতটা তীব্র হবে শীত?
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূলত শীতকাল হলেও সাধারণত দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকেই, যেটার খুব একটা তারতম্য হয়নি এবারও।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি কিছুটা পাল্টে গেছে, যার কারণে শীতকালের সময় এবং ধরন ঠিক আগের মতো হচ্ছে না।
শীতের শুরু কবে?
আবহাওয়াবিদরা বলেন, সাধারণত স্বস্তিদায়ক তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বোঝানো হয়। আর ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের সময়কালকে শীতকাল হিসেবে ধরে থাকেন।
মিগজাউমের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাতের পর এই মাসের ১০ তারিখের পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু হবে বলে জানাচ্ছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
উত্তরাঞ্চলে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে বলে জানান মল্লিক।
এটিকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবেও দেখা যায় কারণ শীতকালে ২.৬ থেকে শুরু করে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গেলে সেটা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে পড়ে।
গত ৩০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, ডিসেম্বর মাসে সাধারণত একটি থেকে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা থাকে।
অবশ্য আরেক জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান মনে করছেন, শীতকালের শুরুটা মূলত ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধের দিকে অর্থাৎ ১৬ তারিখের পর কোনো একটা সময় থেকে হবে।
তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতের পর পর তাপমাত্রা হঠাৎ করে নেমে গেলে শীত অনুভূত হবে, তবে প্রকৃত অর্থে এটি শীতকাল নয়।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি যখন আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে বায়ুমণ্ডল পুরোপুরি শুষ্ক হয়ে যাবে, তখন শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যেটা হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন মি. মান্নান।
তিনি বলছিলেন, এ মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে একটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সেটি পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধ, অর্থাৎ ১৬ তারিখের পর থেকে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে প্রকৃত অর্থে শীতকাল শুরুর সম্ভাবনা দেখছেন তিনি, যখন রাতের তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামবে।
কেমন হবে শীতকাল?
বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিল এ বছরেরই জুন মাসে।
আমেরিকা ও ইউরোপের মতো শীতপ্রধান জায়গায় তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করেছে মানুষ। বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা উচ্চতম রেকর্ড ছুঁয়েছে, যার একটা প্রধান কারণ ছিল ‘এল নিনো’ নামে প্রাকৃতিক আবহাওয়া চক্র।
এই ‘এল নিনো’ ও একই সঙ্গে বিশ্বের বাড়তে থাকা তাপমাত্রার প্রভাবে এবারের শীতকালটা আগের তুলনায় কিছুটা উষ্ণ হওয়ার কথা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এল নিনো সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে যে অবস্থাটা মে মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং এল নিনো সক্রিয় থাকাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে সাধারণত বেশি তাপমাত্রা দেখা যায়, বলছিলেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মল্লিক।
প্রতি তিন থেকে সাত বছরের মধ্যে একবার এই এল নিনো দেখা দেয়, যখন তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩০ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় হিসেবে স্বাভাবিকভাবে ডিসেম্বর মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে।
এ বছর ডিসেম্বর মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৪.৫ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে বলে ধারণা দেন মল্লিক।
সূত্র: বিবিসি।