চীন থেকে আনা ২০টি ডেমু ট্রেন অকেজো হয়ে পড়ার পর দেশের প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় তার মধ্যে পাঁচটি সচল করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি রোববার বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়েছে।
দুপুরে দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলস্টেশনে ডেমু ট্রেন চালুর উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। উদ্বোধনের পর ট্রেনটি ৩৭ কিলোমিটার দূরের রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিকেলে আবার সেটি পার্বতীপুরে ফিরে আসে।
পার্বতীপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে চীন থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন আমদানি করে। যার পুরো নাম ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট। সেই সময় এতে ব্যয় হয়েছিল ৬৩০ কোটি টাকা। স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য ট্রেনগুলো আমদানি করা হলেও চালানো হয়েছে দূরপাল্লার রুটে। ২০ বছর মেয়াদ থাকলেও চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বিকল হতে শুরু করে ট্রেনগুলো। এগুলোর দুদিকে দুটি ইঞ্জিন ও মাঝখানে তিনশ যাত্রীর বসার ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে চীনা প্রযুক্তিকে ফেলে দিয়ে আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা স্বল্প ব্যায়ে ডেমুকে সচল করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সবকটি অকেজ ডেমুকে রেল বহরে যুক্ত করা হবে। ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ভাড়া ধরা হয়েছে মাত্র ২০ টাকা।’
পরে মন্ত্রী সফরসঙ্গীদের নিয়ে খোলাহাটি স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে ভ্রমণ করে পার্বতীপুরে ফিরে আসেন।
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ডেমু ট্রেনকে সচলকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী ও আনবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপাতত ট্রেনটি রংপুর পথে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে পার্বতীপুর ছেড়ে রংপুর পৌঁছাবে সন্ধা ৬টা ১০ মিনিটে। আর রংপুর থেকে ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে পার্বতীপুর এসে পৌছাবে রাত ৭টা ২০ মিনিটে। ভালভাবে চললে ট্রেনটিকে পরে পার্বতীপুর-কাউনিয়া-কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরের পথে চালানো হবে।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চীনের তানশাং ইন্টারন্যাশনাল ও দানিয়াল টেকনিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউড কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ডেমু ট্রেনগুলো নির্মাণ করেন। এগুলো এক ধরনের সফটওয়্যারে পরিচালিত। কোম্পানি ট্রেনগুলো বাংলাদেশে হস্তান্তর করলেও নির্মাণ প্রযুক্তি বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের অবগত করেনি। ফলে এর মডিউল বিকল হলে নতুন মডিউলের সঙ্গে সফটওয়্যার সেটআপ দেওয়া প্রয়োজন দেখা দিত। একটি ডেমুতে ৪০টির মতো মডিউল রয়েছে যার প্রতিটির দাম সাত লাখ টাকা। এসব সেটআপ দিতে চীনা প্রকৌশলীদের দারস্থ হতে হতো। এতে ব্যয় হতো প্রচুর। এ কারণে পড়ে ছিল ট্রেনগুলো।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর-উর-আলম টেনগুলোকে সচল করতে দেশি প্রকৌশলীদের দারস্থ হন। এগিয়ে আসেন প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান। তিনি গবেষণা করেন ডেমু ট্রেন নিয়ে। তিনি দেড় বছরের চেষ্টায় মাত্র ৭২ দিন কাজ করে চীনা প্রযুক্তি বাদ দিয়ে দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ডেমু ট্রেনকে সচল করেছেন। তাঁর সহযোগী ছিলেন প্রকৌশলী আজিম বিশ্বাস। তাদের কাজে সহযোগিতা করেন পার্বতীপুর ডিজেল লোকো ওয়ার্কশপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।