চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে ৬৮ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করলেও গত সাড়ে ৩ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর দুপাশের সংযোগ সড়ক। এতে করে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না ১০ গ্রামের মানুষের। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষের। সংযোগ সড়ক না থাকায় বাঁশের সাঁকোই হলো পারাপারের একমাত্র উপায়। বয়োবৃদ্ধ, কোমলমতি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হচ্ছে অহরহ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে ৬৮ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সেতুটি। ২০২২ সালের অক্টোবরে ৫০ ফুট দীর্ঘ, ১৪ ফুট চওড়া সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সেতু ও সংযোগ সড়ক একই সঙ্গে করার কথা থাকলেও সেতুর কাজ সম্পন্ন হলেও সড়কের কাজ করা হয়নি। এই গার্ডার সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। পরে লটারির মাধ্যমে সোনালী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা সেতুর কাজটি করেন। ঠিকাদার গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
রোববার (১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মতলব দক্ষিণ উপজেলার নিউ হোস্টেল মসজিদের পশ্চিম পাশের খালে এখন খাম্বার মতো শুধু দাঁড়িয়ে আছে নামধারী সেতুটি। সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। গেল সাড়ে তিন বছরেও পারাপার হতে পারেনি কেউ, এমনটাই জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, তাদের কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দিয়ে ১টি ফাজিল মাদরাসা, ২টি কলেজ, ৪ থেকে ৫টি কিন্ডারগার্টেন, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং চরমুকুন্দী, কদমতলী, নিলক্ষী, চরপাতালীয়া, উধমদী, নবকলস, কলাদিসহ ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে আসছে। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে আজ এই ভোগান্তি।
বেশ কয়েকজন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিন স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করি। এই সেতুর পাশে একটা বাঁশের সাঁকো আছে। অনেক ভয় নিয়ে সাঁকো পার হই। বৃষ্টির দিনে সাঁকো পানিতে ডুবে যায়। সেতুর অভাবে আমরা বৃষ্টির দিনে স্কুলে যেতে পারি না। এজন্য কয়েক বছর ধরে লেখাপড়ারও ক্ষতি হচ্ছে।
এলাকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর যাবৎ সেতুটি হয়েছে। কিন্তু দুপাশের সড়ক না থাকায় আমাদের এখানকার কেউ যাতায়াত করতে পারছেনা। যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে স্কুল-কলেজে যেতেও পারছিনা। মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বর্ষাকালে সেতুর পাশে বাঁশের সাঁকো দিয়ে আমাদের পারাপার হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমন ব্রিজ হয়ে আমাদের কি লাভ? রাস্তা নাই, অহেতুক এই ব্রিজটা করেছে সরকার।
স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি পরিবার নিয়ে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া বাসায় বসবাস করতাম। সেতুর দুপাশের সড়ক না থাকার কারণে প্রতিদিন আমার যাতায়াতে অনেক সমস্যা হতো। অনেক পথ ঘুরে আসা-যাওয়া করতে হতো। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় বেশি লাগে, ৫০ টাকা ভাড়াও বেশি লাগে। বর্ষাকালে অবস্থা পুরো খারাপ হয়ে যায়। এজন্য ওই এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে বাসা পরিবর্তন করে এসেছি। এই সেতু দিয়ে হাজারও মানুষ চলাচল করে। স্কুল, মাদরাসা, কলেজের অনেক শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। পানিতে পড়ে হঠাৎ করে কখন যেন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু কেনো দু’পাশের সড়ক হচ্ছে না তা জানি না। সড়ক হওয়া আমাদের সকলের জন্য অতীব জরুরি। সরকারের কাছে জোরালো দাবি আমাদের জনগণের জন্য সেতুর দুপাশের সড়কটি চাই।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতুটি জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। তবে সংযোগ সড়কের জন্য একটি প্রকল্প দিয়েছি। খুব দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং ভোগান্তির লাঘব হবে।
মতলব পৌরসভার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এই সেতুটি ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেতুর দুপাশের সংযোগ সড়কটি নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, পথচারী ও এলাকাবাসী।