অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোট ব্রিকসের সদস্য হতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে তুরস্ক। গতকাল বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, জোটের সদস্য দেশগুলো তুরস্কের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করবে।
রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া বর্তমানে ব্রিকস জোটের চেয়ারম্যান। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ২২-২৪ তারিখ রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে এই সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এরদোয়ান পুতিন আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন উশাকভ।
উশাকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ (ব্রিকস) জোটের পূর্ণাঙ্গ সদস্য হতে তুরস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে। আমরা এই বিষয়টি বিবেচনা করব।’ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর একমাত্র সদস্য হিসেবে ব্রিকসে—যেটা পশ্চিমা বিরোধী জোট বলেই বিশ্বে পরিচিত—যোগ দেওয়ার আবেদন করেছে।
এর আগে, গত সোমবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল—তুরস্ক কয়েক মাস আগেই ব্রিকস জোটে সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে এবং মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ন্যাটোর সঙ্গে তুরস্কের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে আঙ্কারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন একে পার্টির মুখপাত্র ওমের সেলিক নিশ্চিত করেছেন যে, আবেদনে প্রক্রিয়া চলমান এবং এরদোয়ান এর আগে নিজেও ‘বেশ কয়েকবার’ বলেছেন, তুরস্ক ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। ওমের সেলিক, ‘এই বিষয়ে আমাদের অনুরোধ পরিষ্কার। এই প্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু এই বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি হয়নি। আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, তুরস্ক ব্রিকসসহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে অংশ নিতে চায়।’
এর আগে, ২০০৬ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন মিলে ব্রিকস গঠন করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১১ সালে জোটে যোগদান করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত পূর্ণ সদস্য হয় জোটের। উশাকভের মতে, ৩০ টিরও বেশি দেশ এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে।
এদিকে, ব্রিকসে যোগ দিকে তুরস্কের আবেদন ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইইউ মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো গত মঙ্গলবার ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইইউতে যোগদানের প্রার্থী হিসেবে আঙ্কারাকে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগদান করতে হবে তা বেছে নেওয়ার অধিকার থাকা সত্ত্বেও দেশটিকে ইইউ—এর মূল্যবোধ এবং বৈদেশিক নীতির পছন্দকে সম্মান করতে হবে।
তুরস্ককে ১৯৯৯ সালে ইইউ—এর সদস্যপদ প্রার্থী দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে ২০০৫ সাল থেকে দেশটির জোটে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ২০১৯ সালে দেশটির ইইউকে যোগদানের আলোচনা স্থগিত করে।