ই-সিগারেট নিষিদ্ধ: সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ

ফানাম নিউজ রিপোর্টার
  ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৪২

কিশোর-তরুণ ও যুব সমাজ ধ্বংসে সিগারেট কোম্পানির নতুন মরণাস্ত্র ই-সিগারেট নিষিদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারের মহৎ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে মানস-মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা।

সম্প্রতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ এ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকায় ই-সিগারেট (ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম) অন্তর্ভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য ও পবিরার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর তথ্যভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি ও সুপারিশের প্রেক্ষিতে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ দেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং আগামী প্রজন্মের প্রতিনিধিদেরকে তামাকের নতুন মরণফাঁদ থেকে রক্ষা করবে। ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণের অপকৌশল বিঘ্নিত হবে এবং প্রচলতি তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ আরো গতি পাবে। যা দীর্ঘমেয়াদের একটি সুস্থ জাতি বিনির্মানে সহায়ক হবে।

সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে মানস এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ‘জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ পৃথিবীতে প্রায় সকল উন্নত ও সভ্য জাতির সাফল্যের বড় যোগসূত্র। তাদের সবকিছুতেই জনগণ মুখ্য, গৌণ নয়। বিশেষত, ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষায় সেই সমস্ত রাষ্ট্র নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সদা তৎপর বলেই সফলতার শীর্ষে আরোহণ করছে। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশার বড় কারণ- তামাক। ধূমপান ও তামাকজনিত রোগ-বালাই, মৃত্যুর মিছিল আরো দীর্ঘ করতে কুচক্রি সিগারেট কোম্পানিগলো ই-সিগারেট-কে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের নতুন কৌশল হিসেবে প্রয়োগের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।’’

তিনি বলেন, ‘‘তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে নতুন ফাঁদে ফেলছে। ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতিকর!  ভেপ, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ এর শিকার হতে পারেন।  সরকার জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ই-সিগারেট নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর সুফল আমরা নিশ্চয়ই পাবো। ব্যক্তিগতভাবে আমি সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর, বিভাগ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

উল্লেখ্য, মানস রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে এডভোকেসী পরিচালনাকারী অন্যতম একটি বেসরকারি সংস্থা। ড. অরূপরতন চৌধুরী’র নের্তৃত্বে মানস জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত ৭ অক্টোবর ২০২৪ মানস এর প্রতিনিধি দল মাননীয় উপদেষ্টা’র সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তার নিয়োগের পর প্রথমবারের মতো তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাক্ষাৎ করেন। এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্ঠাকে ই-সিগারেটের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত এবং নিষিদ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত তথ্যসহ চিঠি প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ই-সিগারেট নিষিদ্ধে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে অতি দ্রুত একটি চিঠি প্রেরণ করেন এবং সেই সূত্র ধরেই বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি’র সুপারিশের প্রেক্ষিতে বানিজ্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ড. অরূপরতন চৌধুরী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে এ সকল সভায় অংশ নেন এবং গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। এছাড়াও মানস উক্ত বিষয়ে সভা-সেমিনার আয়োজন করে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ই-সিগারেট নিষিদ্ধে প্রচারণা চালায় এবং কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

মানস মনে করে, এই সাফল্য সকল দেশের সকল তামাক বিরোধী ব্যক্তি, সংগঠন এবং সচেতন মহলের, যারা জনস্বাস্থ্য এবং জনগণের স্বার্থ সুরক্ষায় একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ৪৯% তরুণ জনগোষ্ঠি তামাক ও মাদকের নেশামুক্ত থেকে আগামীতে সুদক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হবে, দেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতিতে অবদান রাখবে। জনস্বার্থে মানস তার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়