কেউ গবেষণা করেছেন ক্যান্সার নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি নিয়ে, কেউ-বা কাজ করেছেন অটিজম শনাক্তের উপায় নিয়ে। কারও গবেষণায় বাতলে দেওয়া হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর উপায়, মশা নিধনের কৌশল বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত রং উৎপাদনের পদ্ধতি। বাদ পড়েনি ডায়রিয়া প্রতিরোধে সামুদ্রিক শেওলার ব্যবহার ও রান্না করা ব্রয়লার মুরগির দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্ণয়ের বিষয়ও।
এমন সব জীবনঘনিষ্ঠ থিসিস (গবেষণাপত্র) উপস্থাপন করে জাতীয় জীবপ্রযুক্তি থিসিস উপস্থাপন প্রতিযোগিতা-২০২৪’ এর চূড়ান্ত পর্বে সম্মানিত হলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাত তরুণ গবেষক।
এরা হলেন- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ জুবায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ জামিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আল বিরুনী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিন বরকতউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানবিম সামিন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ইমতিয়াজ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা হক।
এদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় জিন প্রকৌশল ব্যবহারে অটিজম রোগ নির্ণয়ের থিসিস উপস্থাপন করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ‘মুনিরা বকুল বেস্ট প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড’ পায় চবি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের মোহাম্মদ আল বিরুনী। এছাড়া মশক নিধনের নতুন প্রযুক্তি নিয়ে রানার্সআপ হয় সিকৃবির তানজিন বরকতউল্লাহ। তৃতীয় স্থান পায় আহমেদ জুবায়ের।
নেটওয়ার্ক অব ইয়াং বায়োটেকনোলজিস্টস অব বাংলাদেশের (এনওয়াইবিবি) আয়োজনে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলা কার্যলয়ে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এনওয়াইবিবির সাবেক সভাপতি আরিফ খান এবং ইভেন্ট বিভাগের সহ-সভাপতি রাগিব মুত্তাকী
চূড়ান্ত পর্বে বিচারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও ওয়ান হেলথ গবেষণাগারের পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মিরাজ কোবাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবং এনওয়াইবিবির পরিচালক আদনান মান্নান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাহিদ হাসান এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদ হোসেন।
এর আগে, এ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বে দেশের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের থিসিস পেপার উপস্থাপন করেন। সেখান থেকে ২০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত পর্বের জন্য ৭টি দল নির্বাচিত হয়।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে এনওয়াইবিবির পরিচালক অধ্যাপক আদনান মান্নান এনওয়াইবিবির কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশে অর্থ বরাদ্দ না পেলেও গবেষণা থেমে নেই। যার যতটুকু সুযোগ আছে, সেটুকু কাজে লাগিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা বিশ্বমানের গবেষণা করার চেষ্টা করছে। সব জায়গাতেই কাজ হচ্ছে। কিন্তু একজনের কাজ সম্পর্কে আরেকজন ঠিকভাবে জানতে পারছে না। আমরা সেই বাধাটা দূর করতে চাই। আজ এখানে সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আছে। ঢাকার একটা ছেলে জানছে চট্টগ্রামে কেমন গবেষণা হচ্ছে, চট্টগ্রামের ছেলেটাও পরিচিত হচ্ছে এখানকার গবেষণার সঙ্গে। এটা খুব দরকারি। করোনা অতিমারির কারণে মাঝে অনেকটা সময় আমরা এ আয়োজন করতে পারিনি। ভবিষ্যতে নিয়মিত এ ধরনের আয়োজন করতে চাই।’
নেটওয়ার্ক অব ইয়াং বায়োটেকনোলজিস্টস অব বাংলাদেশ (এনওয়াইবিবি) আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় সহযোগী হিসেবে ছিল ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকিউলার এপিডারমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ, চট্টগ্রাম এবং ক্যান্সার কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ট্রাস্ট বাংলাদেশ (সিসিআরটি)।