খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ধমকে সোমবার থেকে দেশের বাজারে চিকন চালের দাম কেজিতে দুই টাকা করে কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন মিল মালিকরা।
এর আগে খাদ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ ধান ও চালের অবৈধ মজুত উদ্ধার করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক সভায় খাদ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিলে চালের দাম কমানো হয়।
রবিবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মজুতদারি রোধে করণীয় ও বাজার তদারকি সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় মিল মালিকরা চালের দাম কমানোর ঘোষণা দেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করার পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আবার নতুন করে যুদ্ধে নামতে হবে এটা আমার জানা ছিল না। কুষ্টিয়ার রশিদ সাহেবসহ চার/পাঁচজন চালকল মালিক বাংলাদেশের চালের বাজার কন্ট্রোল করেন। আমি তাদের বলব আজই আপনারা বসেন। আগামীকাল থেকে চালের বাজার বাড়া দূরের কথা, যদি না কমে আমরা যত ভালো ভালো কথা বলি না, আমাদের প্রশাসন কিন্তু তত ভালো থাকবে না, এটা আমার শেষ কথা। কোনোক্রমে খাদ্য নিয়ে রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মাঠপর্যায়ে কে কী করছে, সেটা আমরা কঠোর নজরদারিতে রাখছি। মন্ত্রী, সচিব ও ডিজি আমরা ইউনাইটেডলি সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমার মাঠপর্যায়ে যারা আছে তারা যেন সাবধান হয়ে যায়। সাবধানতা ফসকে যদি কিছু হয় তাহলে তার নিজের দায় নিজেকেই গ্রহণ করতে হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, পৌর মেয়র আনোয়ার আলী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম. সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাসহ রাজনৈতিক ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সোমবার থেকে দেশের বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল কেজিতে দুই টাকা কমানোর ঘোষণা দেন বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ।
তবে তারা চালের দাম না কমিয়ে আর বাড়বে না বলে মত দেন। তখন খাদ্যমন্ত্রী তাদের চালের দাম কমাতে চাপ দেন। এরপর মিল মালিকরা দাম কমান।
এর আগে মন্ত্রী বাংলাদেশের বৃহত্তম চালের মোকাম খাজানগরের কয়েকটি মিল পরিদর্শন করেন। সেখানে চালের গুদামে বিপুল ধান ও চালের অবৈধ মজুতদারির অস্তিত্ব পেয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় প্রধান রশিদ ও দেশ এগ্রোর গুদামে বিপুল চাল ও ধানের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে দেশ এগ্রোর মালিক আব্দুর রশিদ তবে এবং দেশ এগ্রোর আবদুল খালেক এ মজুত অবৈধ নয় বলে দাবি করেন।
তখন খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম এর বিরোধিতা করে বলেন, অবশ্যই এ সময়ে এমন মজুত রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরেই এসব চাল মজুত করে রাখায় হয়েছে বলে প্রমাণও দেন তিনি।
এরপর অনুষ্ঠিত সভায় মিল মালিকরা তোপের মুখে চালের দাম আর বৃদ্ধি পাবে না বলে সমাধানে আসতে চাইলেও পরে দাম কমাতে বাধ্য হন।
সূত্র: দেশ রূপান্তর