শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বসতঘর, দোকানপাটসহ ২৬টি স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে অন্তত ৬০০ পরিবারের।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ওই অংশে ১৩০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে।
ভাঙন আতঙ্কে ইতোমধ্যে নদীর পাড় থেকে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। তাদের আশঙ্কা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদীতে বিলীন হবে রাস্তাঘাট, হাট-বাজারসহ শতাধিক বসতবাড়ি। উপজেলার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে আছেন।
ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
২০১০-২০১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় ধস শুরু হয়।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া এলাকাটির আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল সেখানে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ও সিসিব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়।
এদিকে, গত কোরবানির ঈদের দিন ভোররাতে সংস্কার করা বাঁধের ১০০ মিটার অংশসহ পাশের আরও একটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়। একদিনের মধ্যে বাঁধের ২৫০ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে নতুন করে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয় ১৬টি বাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় ১৫টি দোকান।
মঙ্গল মাঝির ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আকস্মিক ভাঙনের কারণে শ্রমিক সংকট শুরু হয়েছে। এজন্য পরিবারের সদস্যরাই নিজেদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। যেকোনো উপায়ে ভাঙন রোধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি আমরা।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হাওলাদার বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, বাঁধের ১৩০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ইতোমধ্যে কিছু বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রায় ৯০ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পদ্মার পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি। ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চলছে। বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া ২৬টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে, তাদের মধ্যে দুই বান টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে প্রশাসন।