১২ বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল ২১ রান। ১৯তম ওভারে আক্রমণে এসে মোহাম্মদ আমির দিলেন মাত্র ৬, ফলে অনেকটাই সহজ হয়ে গেল হারিস রউফের কাজ। কিন্তু শেষ ওভারে প্রথম তিন বলে ৩ রান দেওয়া রউফ ভুল করলেন ইয়র্কার দিতে গিয়ে। চার-ছক্কার দুই বাউন্ডারিতে যুক্তরাষ্ট্রও স্কোরে সমতা টেনে ফেলে। এরপর সুপার ওভারের নাটকীয়তায় পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে আইসিসির সহযোগী দেশটি।
পাকিস্তানের হয়ে ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বল করা আমিরের হাতে তুলে দেওয়া হয় সুপার ওভারের দায়িত্ব। তবে এবার আর চাপটা নিতে পারলেন না তিনি, তিন ওয়াইড বলের সঙ্গে অতিরিক্ত রান মিলিয়ে দিলেন ৭। ফলে মাত্র একটি চার মেরেও ১৮ রান পেয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের সেই রানতাড়ায় ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো দু’দিকে ঘুরেছে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেরই শেষ হাসি, সুপার ওভারে তারা জয় তুলে নিলো ৫ রানে।
অভিষেক বিশ্বকাপ, তার ওপর ঘরের মাঠে। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে অপরিচিত ক্রিকেটকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করার সংগ্রাম করছে, একই সময় তাদের ক্রিকেটাররা সেই কাজটি আরও সহজে সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দিয়ে তারা জন্ম দিলো চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আপসেটের। বাবর আজমদের নেওয়া ১৫৯ রান তারা ছুঁয়ে ফেলে পরে ব্যাট করতে নেমে। নাটকীয়তার তখনও কিছুটা বাকি, সুপার ওভারে জিতে যার ষোলকলা পূর্ণ করলো আমেরিকানরা।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আজ (বৃহস্পতিবার) নিজেদের প্রথম ম্যাচে টসভাগ্য পাশে ছিল না পাকিস্তানের। সে কারণে বাধ্য হয়েই তাদের আগে ব্যাট করতে হয়। বাবর আজম ও শাদাব খান ছাড়া বলতে গেলে বাকি ব্যাটাররা সংগ্রাম করেছেন। তবুও এই দুইয়ের কল্যাণে নির্ধারিত ওভার শেষে লড়াকু পুঁজি গড়ে পাকবাহিনী। তবে সেই পুঁজি যে যথেষ্ট ছিল না, তা প্রমাণ করেছেন আমেরিকান অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল ও আন্দ্রিস গুস।
চার পেসারে গড়া পাকিস্তানের শক্ত বোলিং লাইনআপকে তারা পাত্তাই দেননি। যদিও স্টিভেন টেলরের সঙ্গে প্যাটেলের ওপেনিং জুটি ছিল ধীরগতির, ৫ ওভারে ৩৬ রান তুলতেই টেলরের বিদায়ে সেই জুটি ভাঙে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে গুসের সঙ্গে মিলে ৬৮ রান যোগ করেন মার্কিন অধিনায়ক প্যাটেল। ৩৫ রান করা গুসকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু দেন রউফ। আমিরের বলে প্যাটেলও ফিফটি করে ফিরলে, হালে পানি পায় পাকিস্তান। কিন্তু সেটি আর শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। কারণ ৩৫ বলে আর মাত্র ৪৯ রান দরকার মার্কিনীদের। অ্যারন জোন্সের ৩৬ আর নিতীশ কুমারের ১৪ রানের সুবাদে বিশ্বকাপের আয়োজকরা ৪৮ রান পেয়ে যায়। বাবরদের স্বপ্নের বাকি শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় সুপার ওভারে।
পাকিস্তানের হয়ে ১টি করে উইকেট নিয়ে রউফ, নাসিম শাহ ও আমির। শাদাব-শাহীনরা উইকেট শূন্য থাকার পাশাপাশি খরুচে বোলিং করেছেন।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ ওভারে মাত্র ৩০ রান তুলতেই পাকিস্তান তিন উইকেট হারিয়ে বসে। যার শুরুটা হয় ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে দিয়ে। নেত্রভালকারের বলে স্লিপে ঝাপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন স্টিভেন টেলর। রিজওয়ান ফেরেন মাত্র ৯ রানে, বাবর তখনও রানের খাতা খোলেননি। এরপর তৃতীয় ওভারে আউট উসমান খানও। ৩ রানে তাকে ফিরিয়ে উল্লাসে মাতেন নশতুষ কেনজিগে।
ফখর জামানকে ফিরিয়ে সেই আনন্দ দ্বিগুণ করেন কেনজিগে। ৬ হাঁকিয়ে ফখর বিপর্যয় সামলানোর ইঙ্গিত দিলেও থামেন ১১ রান (৭ বল) করে। পাকিস্তানের ইনিংস মেরামতের পুঁজি আসে চতুর্থ উইকেট জুটিতে। বাবর–শাদাব মিলে ৭২ রানের জুটি বাধেন। বাবরের ধীরগতির ইনিংসের পাশে বিপরীতমুখী ঝড় তোলেন শাদাব। তার বিদায়ে রানের চাকায় খিল ধরে। সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে ১টি চার ৩টি ছক্কায় ৪০ রান করেন শাদাব।
পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিলেন এই বাঁ–হাতি এই স্পিনার। শাদাবের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে কেনজিগের বলে এলবিডব্লু আজম খান, তিনি রানের খাতাই খুলতে পারেননি। রিভিউ নিয়েও সফল হননি সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে সমালোচিত এই ব্যাটার। ফিফটি পূর্ণ করার আগে বিদায় ঘটে পাক অধিনায়ক বাবরেরও। ৪৩ বলে ৩টি চার ও ২ ছক্কায় তিনি ৪৪ রান করেন।
এ ছাড়া শেষদিকে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি এনে দিয়েছেন শাহিন আফ্রিদি। এই টেলএন্ডার ১৬ বলে ২৩ এবং ইফতিখার আহমেদ করেন ১৪ বলে ১৮ রান। তাতে ১২০–৩০ এ থেমে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা পাকিস্তানও দেড়শ পেরোয়।