সিলেটের হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এবার দেখা গেল দেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি ‘বেগুনি পিঠ-শালিক’। দেশের বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেনের ক্যামেরায় আলোচিত মান্দার গাছে এ পাখির ছবি ধরা পড়ে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি ট্যুরে এসে কয়েক দিন অপেক্ষার পর গত ১০ মার্চ ভোরে বেগুনি পিঠ-শালিক পাখিটি ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি।
আলোকচিত্রী তিমু হোসেন বলেন, খুবই কম দেখা পাওয়া যায় পাখিটিকে। এর ইংরেজি নাম ডাউরিয়ান স্টারলিং (Daurian Starling) এবং বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাগ্রপসার স্টারনিনাস (Agropsar sturninus)।
তিমু হোসেন বলেন, পাখিটি আকারে ১৭-১৯ সেন্টিমিটার। তারা শালিক গোত্রের মাঝারি আকারের এক পাখি। বাংলাদেশ মোটামুটি দুই বছর পর আবার এ পাখিটিকে দেখা গেছে। একাকী অথবা দশ-পনেরোটি বা তারও বেশি সংখ্যায় যুক্ত হয়ে দলবদ্ধভাবেও চলাফেরা করে থাকে।
রঙের বৈচিত্র্য ও খাদ্যগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাখিটির নিম্নভাগ এবং মাথা ফ্যাকাসে ধূসর-বেগুনি রঙের ডানায় উজ্জ্বল সবুজ আভা এবং ‘ভি’ (ঠ) আকৃতির এক সাদা রেখা আছে। অন্যান্য শালিকের মতো এটি মূলত পোকাভুক অর্থাৎ ছোট-মাঝারি পোকামাকড় খায়। এ ছাড়া ফলমূল ও শস্যদানাও খেয়ে থাকে।
মূলত মঙ্গোলিয়া, দক্ষিণপূর্ব রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং মধ্য চীনের নাতিশীতোষ্ণ বনের পাখি এরা। ভারত ও বাংলাদেশে ভবঘুরে পরিযায়ী এবং আপাতত দুর্লভ বলে জানান বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্র জানায়, অনিয়মিত ও দুর্লভ এ বেগুনি পিঠ-শালিক পাখিটির কয়েকবার আমাদের দেশে দেখা গেছে।
২০০৯ সালের সুন্দরবনের হারবেরিয়ায় প্রথমবার এ পাখিটির দেখা মেলে। এর পর ২০১০ সালে মধুপুরের শালবনে একটি পাখিকে এবং একই বছর ঢাকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এই প্রজাতির পাখিদের একটি ঝাঁকের দেখা পান পাখি গবেষকরা।
এর পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এই পাখিটিকে প্রাপ্তির রেকর্ড রয়েছে।
এ পাখিটি মূলত ‘পরিযায়ী’ বা আসা-যাওয়ার পাখি। কিছু দিন সেখানে অবস্থান করে পুনরায় আগের স্থানে ফিরে আসে। পাখিরাজ্যে এই ‘পরিযায়ী’ বা ‘পরিযান’ তাদের জন্য খুব স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের এ মান্দার গাছ থেকে তোলা দেশের দুজন বিখ্যাত ফটোগ্রাফারের তোলা দুটি ছবি আন্তর্জাতিক পৃথক প্রতিযোগিতায় লক্ষাধিক ছবিকে পেছনে ফেলে প্রথম পুরস্কার লাভ করে। এর পর থেকেই প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে এ গাছে পাখির ছবির জন্য দেশের সৌখিন ও পেশাদারি শতাধিক ফটোগ্রাফার সাতছড়িতে ভিড় করেন।
সূত্র: যুগান্তর