ক্রেতার গ্লাসে ফেনসিডিল ঢেলে দিচ্ছেন ইউপি মেম্বারের স্ত্রী আর টাকা নিচ্ছেন মেম্বার। সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাদশা মিয়ার বাড়িতে। তিনি উপজেলার মালগাড়া গ্রামের মৃত ফজলের রহমানের ছেলে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি মেম্বারের স্ত্রী স্বপ্না বেগম ২০ টাকা কম পাওয়ায় এক ব্যক্তির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। তখন ওই ব্যক্তি বলেন, এখানে প্রশাসন আসে না? স্বপ্না বেগম বলেন, এটা মেম্বারের বাড়ি। এখানে প্রশাসন ক্ষমতা রাখে না।
এ সময় ফেনসিডিলের দামের ব্যাপারে স্বপ্না বেগম বলেন, আজ দাম বাড়ানোর জন্য ৫০০ মাল ফেরত দিয়েছি। যেখানে কম পাবেন, সেখানে গিয়ে খান। এখানে আসছেন কেন? ইনট্যাক খান, খোলা খাবেন কেন?
তখন ওই ব্যক্তি বলেন, সব সময় মেম্বারের বাড়িতে নিরাপত্তা বেশি থাকে। সে জন্য এখানে আসি।
ওই ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ফেনসিডিলের টাকা সরাসরি ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার হাতে দেওয়ার সময় তার স্ত্রীর খারাপ আচরণের বিষয়ে অভিযোগ দেন এক ক্রেতা। এ সময় বাদশা তার স্ত্রীকে শাসন করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লালমনিরহাটসহ রংপুর বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ফেনসিডিল খেতে নারীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ বাদশা মেম্বারের বাড়িতে আসেন।
শুধু তাই নয়, তার বাড়ি থেকে ফেনসিডিল দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে ব্যবসা ঠিক রাখতে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে গোড়ল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হন বাদশা। নির্বাচিত হওয়ার পর পুরোদমে শুরু করেন মাদক বিক্রি।
এ ঘটনায় বাদশা মিয়ার ছেলে শাহিন আলমকে (১৯) আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইউপি মেম্বারের স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে (৩৫) এক বাড়িতে ঘিরে রাখা হয়েছে। নারী পুলিশ দিয়ে রাতেই তাকে আটক করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউপি মেম্বার বাদশা মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলে না। বললে মামলা-হামলার ভয় দেখান। প্রতিদিন বিকেল হলেই মদপান করতে দামি গাড়িতে করে অনেকেই তার বাড়িতে আসেন।
এ বিষয়ে জানতে বাদশা মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
গোড়ল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই ইউপি মেম্বার নির্বাচনের আগে মাদক মামলায় স্ত্রীসহ কারাগারে গিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি না তা আমার জানা নেই।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম গোলাম রসুল বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা যত বড় হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় ইউপি মেম্বারের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর