শিরোনাম
এক চোখে অস্পষ্টতা আর দুর্বল দেহ নিয়ে কাঠ পোড়ানো রদ্দুর কিংবা বৈরি আবহাওয়ায় ছুটে চলা। কারো সাহায্য নয়, ক্ষুধা নিবারণের রসদ যোগাতেই ঘর্মাক্ত শরীরের এই অদম্য চেষ্টা। ঘরে ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ স্ত্রী ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারেন না। কঠোর পরিশ্রমের ফাঁকে নিজ হাতে রেধে মুখে তুলে খাওয়াতে হয় তাকে।
ভাড়ায় চালিত রিকশায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীরটা যখন ক্লান্ত। তখন ঘরে ফিরে বিশ্রাম নেয়ার সৌভাগ্যটাও বদলে যায় রান্না চাপানো উনুনের আগুনের তাপে। আর বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের সংসার জীবনে পাশে দাড়াঁতো যে ছেলেটা সেও পৃথিবী ছেড়েছে প্রায় ১৫ বছর। তবুও জীবন সঙ্গিনীকে পাশে রেখে ক্ষয়িষ্ণু জীবনের চেনা ঘানি টেনে যাচ্ছেন জীবদ্দশায় হার না মানা যোদ্ধা বয়োবৃদ্ধ গণি মিয়া।
কলাপাড়া পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত জাহাঙ্গীর খানের ছেলে সত্তরোর্ধ্ব গণি মিয়া। পরিবারে তেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও স্ত্রী এবং ছেলে বায়েজিতকে নিয়ে ছিল ছোট্র সুখের সংসার। ১৫ বছর আগে আকস্মিক মৃত্যু হয় একমাত্র পুত্র সন্তানের। এর পরেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তার স্ত্রী মালেকা বানু।
গত পাচ বছর যাবত প্রায় অচলাবস্থায় রয়েছেন তিনি। বার্ধক্যের কারণে নিজ শরীরে নানান রোগের আনাগোনা থাকলেও স্ত্রীর চিকিৎসা আর জীবিকার তাগিদে এখন ভাড়াটে রিকশার ড্রাইভার তিনি। প্রতিদিন দেড়শো টাকায় একটি অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে দিনভর যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। আর এই কাজের আয় থেকে রিকশা মালিকের ভাড়া বাদে প্রতিদিনের আয় থাকে তিন থেকে চারশো টাকা। যা দিয়েই চলে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সংসারের কেনাকাটা।
গণি মিয়ার ভাষ্যমতে, সারাদিন রিকশা চালিয়ে ঘরে ফিরে নিজ হাতে রান্না করে মুখে তুলে খাওয়াতে হয় তার ভালোবাসার মানুষটিকে। কোনো কোনো দিন রান্না করতে না পারলে সেদিন পান্তা খেয়েই থাকেন দুজন। কিন্তু স্ত্রীকে রেখে বাইরে কিছু খান না তিনি। আর বিকল্প কোনো আয়ের পথ না থাকায় এভাবেই চলছে তাদের জীবন সংসার। যেখানে অর্থ প্রাচুর্য্য না থাকলেও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই তার। তবে কোনো ভাতা পান না বলে অনেকটা ক্ষুব্ধ তিনি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অলিউল ইসলাম জানান, তারা হয়তো ভাতার জন্য আবেদন করেননি। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই তাদের ভাতা সুবিধা দেয়া হবে।