হলুদ পাহাড়ি কাছিম (কচ্ছপ)। উভচর এই প্রাণীটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। তবে প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে কোথাও কোথাও এদের দেখা মিলে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার উলিটিলায় এই বিপন্ন হলুদ কাছিমের দেখা মিলেছে।
হলুদ পাহাড়ি কাছিমকে চাকমা ভাষায় বলা হয় ‘পারবো ডুর’। এরা লম্বায় ৩৩ সেমি পর্যন্ত হয়। ওজন প্রায় ৩ কেজি। বর্ষায় এরা ডিম পাড়ে। ৩ থেকে সাড়ে ৫ মাস পর ছানা বের হয়।
ছয় বছর ধরে মাটিরাঙার উলিটিলায় প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ করছে ‘পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগ’ নামের একটি সংগঠন। এর প্রধান স্বেচ্ছাসেবী মাহফুজ রাসেল বলেন, হলুদ পাহাড়ি কাছিম উভচর প্রাণী হলেও এরা ডাঙায় থাকে। গুল্মজাতীয় খাবার এদের প্রিয়। এরা সবুজ ঘাস, লতাপাতা, ফুল ও ফল খায়। ডাঙায় থাকে বলে মানুষ এটি শিকার করে মাংস রান্না করে খায়। ফলে দিন দিন এর সংখ্যা কমছে।
মাহফুজ রাসেল আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী এই কাছিম বিপন্ন হলেও আমাদের দেশে এটি মহাবিপন্ন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুসারে এটি সংরক্ষিত প্রাণী। ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমরা এই বিপন্ন প্রাণীটি দেখতে পেলাম। পরে কাছিমের খোলসে সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে তা বনে ছেড়ে দিই আমরা।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, হলুদ পাহাড়ি কাছিম খুবই দুর্লভ। এখন বনের ভিতরেও মানুষের বসতি হয়েছে। ফলে কাছিমসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী হত্যার শিকার হচ্ছে। খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় এদের বিচরণ। মানুষ যদি এদের না মারে তাহলে এদের প্রজনন বাড়বে। কেউ যাতে এ ধরনের কাছিম শিকার করতে না পারে সেজন্য বন বিভাগ সর্তক রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। জানা যায়, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে ২০ প্রজাতির কচ্ছপ। যার মধ্যে কিছু প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এক সময় বঙ্গোপসাগর, নদীনালা, বিল-বাঁওড়, পুকুরসহ বাড়ির আঙিনাতেই কচ্ছপ দেখা যেত। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন এদের বাসস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
সূত্র: যুগান্তর