বান্দরবানে তীব্র তাপপ্রবাহে জেলাজুড়েই চলছে সুপেয় পানির সংকট। শুকিয়ে যাওয়ায় ঝিরি-ঝরনায় মিলছে না পানি। এতে জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বাসিন্দাদের। এ অবস্থায় চিম্বুক-নীলগিরি এলাকায় পানি বিতরণ করছে রেড ক্রিসেন্ট বান্দরবান ইউনিট।
বুধবার (১ মে) দুপুরে কোরাংপাড়া এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট বান্দরবান ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি দাশের নেতৃত্বে পানি বিতরণ করা হয়।
চিম্বুক-নীলগিরি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের এলাকার কয়েকটি পাড়ায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। দৈনন্দিন কাজের জন্য এসব মানুষের ভরসা আশপাশের ঝিরি-ঝরনা। তবে তীব্র তাপপ্রবাহে এগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে পানি সংকট।
তারা জানান, এক কলসি পানির জন্য হেঁটে পাহাড়ের চূড়া থেকে প্রায় হাজার ফুট নিচে ঝিরিতে নামতে হয়। তবে সেখানেও পানির প্রবাহ নেই। ঝিরির পাশে ছোট ছোট কুয়া কুড়ে যেটুকু পানি মেলে তা নিয়ে বাড়ি ফিরতে সময় লাগে অন্তত দেড় ঘণ্টারও বেশি। পাড়ার কয়েকজনের সঙ্গে দলবদ্ধভাবে পানি আনতে গেলে খালি কলসি নিয়ে ফিরতে হয় অনেককেই।
কোরাংপাড়া বাজারের বাসিন্দা রেং য়ক ম্রো (৫০) বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। তার মধ্যে পানি সংকটে এলাকায় মানুষের জীবনযাপন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
একই পাড়ার লিয়াং বম বলেন, ‘শুকনা মৌসুমে এলাকা মানুষের খাদ্যের চেয়ে খাবার পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। পাড়া থেকে কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে গোসল করা, রান্নার পানি, খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। তখন পাড়ার মানুষের পানি সংগ্রহ করতেই বেশিরভাগ সময় চলে যায়। যাদের একটু টাকা-পয়সা আছে তারা ঝরনার পানি কিনে পান করছেন।’
চিংহ্লাউ খেয়াং নামের আরেকজন বলেন, তিনি ১৫ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন। তবে চলতি মৌসুমে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঝিরি-ঝরনা সব শুকিয়ে গেছে। এখন গোসল করা দূরে থাক, খাবার পানিও মিলছে না ভালোভাবে। এ সংকটে রেড ক্রিসেন্ট খাবার পানি বিতরণ করায় এলাকাবাসী উপকৃত হয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্ট বান্দরবান ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি দাশ বলেন, যেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে, সেসব এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে খাবার পানি বিতরণ করা হচ্ছে। যেখানে গাড়ি নিয়ে পৌঁছানো সম্ভব, সেসব এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের উদ্যােগে খাবার পানি বিতরণ অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, সুপেয় পানির সংকট নিরসনে বান্দরবান সদর ও লামা পৌরসভায় এডিবির অর্থায়নে দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আরও দুটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদন পেলে সুপেয় পানির সংকট কমে যাবে।