উপকূলীয় অঞ্চলে সাধারণত সামুদ্রিক কাছিমগুলো রাতের বেলায় ডিম দিতে বালুচরে আসে। কিন্তু দিনদুপুরে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের বালিয়াড়িতে ডিম দিতে আসা কাছিমের কান্ড দেখে অবাক অনেকে। বিষয়টি 'বিরল' বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের রোদে কাছিমটি উঠেই ঝটপট বালিতে গর্ত খুঁড়ে ডিম দিতে বসে যায়। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ডিম দিয়ে ফের নিরাপদে সাগরে ফিরে যায়।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, 'দীর্ঘদিন ধরে রাতের বেলায়ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে কাছিম ডিম পাড়তে দ্বীপে উঠতে পারছিল না। অথচ ভরদুপুরে ডিম দিতে আসার বিষয়টি সেন্টমার্টিনে কৌতূহল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
সেন্টমার্টিনে কাছিম সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত আজিজুর রহমান বলেন, 'কাছিমের আনাগোনা লক্ষ্য রেখে ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করাই আমার কাজ। দ্বীপের কোনার পাড়া সৈকতে আকস্মিক দুপুরবেলায় কাছিমটি উঠে আসতে দেখে আমি রীতিমতো বোকা বনে যাই। ওঠার পরই দেখি ঝটপট বালিতে গর্ত করে বসে গেছে ডিম পাড়তে। এমন অবস্থায় আমি দ্রুত মোবাইলে ছবি তুলে নিই।'
আজিজুর রহমান আরও বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মী হয়ে কাছিমের ডিম সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত আছি। এর আগে দিনের বেলায় কাছিম ডিম দিতে উঠে আসার ঘটনা আর দেখিনি।'
সেন্টমার্টিন সৈকত এলাকায় কাছিম উঠে আসার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে মাছ ধরা নৌকা ও রিসোর্টের বাতি জ্বালানো বন্ধ করা হয়েছে। এ জন্য জব্দও করা হয়েছে বেশ কয়েকটি জেনারেটর। রিসোর্টগুলোতে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও হই-হুল্লোড় বন্ধেও প্রশাসনিক অভিযান চালানো হয়েছে। এসব কারণে হয়তো-বা দিনেও কিছুটা নির্জন পরিবেশ পেয়ে কাছিম উঠে এসেছে। তবে কুকুরের উপদ্রব কাছিমের জন্য ক্ষতিকর বলে জানা যায়।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের ইউএসএইডের সহায়তায় পরিচালিত কাছিম সংরক্ষণের প্রতিষ্ঠান নেকম এর কর্মী আবদুল লতিফ বলেন, দিনের বেলায় দেওয়া ডিম সূর্যের আলোতে নষ্ট হয়ে যায়। তাই দিনে ডিম দিলেও এগুলো রাতের বেলায় সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে নেওয়া হয়। সেন্টমার্টিনে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পাড়া ডিমগুলো রাত পৌনে ৮টার দিকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যার সংখ্যা ১০৮টি।
সেন্টমার্টিন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, কাছিম কেবল রাতে উঠে আসে। তবে পূর্ণিমা এবং অমাবশ্যার রাতে ওঠে না। কিন্তু দিনের বেলায় কাছিম ডিম দিতে উঠে আসার ঘটনা গত ২৬ বছরের চাকরি জীবনে এই প্রথম দেখা। তবে এক দশক আগে দ্বীপে যখন রিসোর্টের সংখ্যা কম ছিল এবং লোকসমাগম হতো কম, তখন কাছিম দিনে নাকি বালুচরে উঠে ডিম দিতো। এখন এ রকম ঘটনা বিরল হলেও সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
সূত্র: রাইসিং বিডি